Subscribe Us

Thursday, April 24, 2025

যে চাকরিতে ভালো না করলেও বেতন বাড়ে

 


নাজমুল হোসেনের মুখটা মলিনই ছিল।

কিছুক্ষণ আগে জিম্বাবুয়ের কাছে দল হেরেছে। সেই হারের ব্যবচ্ছেদ চলছিল সংবাদ সম্মেলনের একেকটি প্রশ্নে। হতাশ নাজমুল ‘আমরা খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি’ বলে এরই মধ্যে দায়ও নিয়েছেন। এরপরই এল প্রশ্নটা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন—‘আপনাদের ম্যাচ ফি বাড়ানো হয়েছে। বেতনও বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সুযোগ-সুবিধাও ভালো আছে মনে করেন। কোচিং স্টাফও যেমন চাইছে, তেমন পাচ্ছেন। আর কী কী করলে টেস্টে এগোনো সম্ভব?’

লম্বা প্রশ্নের খণ্ড খণ্ড বাক্য শুনতে শুনতেই মুখটা কঠিন হয়ে উঠল নাজমুলের। চেহারায় কাঠিন্য রেখেই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘বেতন বাড়ানোয় মনে হয় আপনারা খুশি না...।’ স্পষ্টতই বিরক্তির প্রকাশ। যার অনুবাদ অনেকটা ‘মাঠে ভালো করতে পারিনি বলে বেতন বৃদ্ধির খোঁটা দিচ্ছেন!’

জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারের বিস্বাদ তখনো চোখে-মুখে। এমন সময়ে কেউ বেতন বেড়েছে মনে করিয়ে দিলে সেটাকে ‘খোঁটা’ মনে হতেই পারে। যদিও মাঠের ব্যর্থতার সঙ্গে পারিশ্রমিক প্রাপ্তির প্রসঙ্গ টানা কেউ সরাসরি তাঁদের বেতন দেন না। জনগণের পরোক্ষ করে ক্রিকেট বোর্ড চলে না, নাজমুলদের বেতনও তাই জনগণ দেয় না। কিন্তু...

কিন্তু সরাসরি পকেট থেকে টাকা না গেলেও যে আনন্দের জন্য মানুষ নাজমুলদের খেলা দেখেন, যে দেখাটাই আবার ক্রিকেট বোর্ডের আয়ের পথ করে দেয়; বৃহত্তর অর্থে নাজমুলদের বেতনের সংস্থানও করে—সেই মানুষের তো ক্রিকেটারদের কাছে ভালো কিছুর প্রত্যাশা থাকেই। সেই প্রত্যাশা থেকে উদ্ভব হয় সুযোগ-সুবিধা আর মাঠ থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোর প্রশ্ন। বিপুল বৈপরীত্য দেখলে আসে তুলনা টানা জিজ্ঞাসাও। তবে এ দেশের আরও অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের মতো নাজমুলদেরও হয়তো এসব জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে ভালো লাগে না। আর ‘খোঁটা’ ‘খোঁটা’ মনে হলে তো প্রশ্নই আসে না।

ক্রিকেটারদের বেতন ও ম্যাচ ফি কত বেড়েছে, সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে মার্চে বিসিবির সাধারণ সভায় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক–সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি বিভিন্ন সূত্রে সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে। গ্রেডিং অনুসারে, তিন সংস্করণের বিবেচনার হিসাবে বেতন নির্ধারণ হয়। তবে এ বছর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ম্যাচ ফি।

আগে একটা টেস্ট খেললে ম্যাচ ফি ছিল ৬ লাখ টাকা, ওয়ানডেতে ৩ লাখ। এ বছর সেটি বাড়িয়ে টেস্টে ৮ লাখ আর ৪ লাখ করা হয়েছে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে ম্যাচ ফি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই। অন্যতম যুক্তি ছিল ২০২০ সালের পর আর ফি বাড়েনি। তবে নাজমুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বিসিবির বোর্ড সভায় প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি। শুধু পারফরম্যান্স বোনাসের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

২০২০ সালের পর ২০২৫—ম্যাচ ফি বেড়েছে পাঁচ বছর পর। প্রতি বছর যেহেতু বাড়েনি, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় টাকার অংক বাড়াটা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু কেউ যদি প্রশ্ন করে বসেন, এই পাঁচ বছরে দেশের ক্রিকেটে সাফল্য কতটা বেড়েছে? কিংবা এর আগের পাঁচ বছরে যেখানে ছিল, সেটাও কি আছে?

নিশ্চিতভাবেই ইতিবাচক কোনো জবাব নেই। মানুষ দেখছে এমন বাস্তবতা যে, পারফরম্যান্সে কোনো উন্নতি না থাকলে সুযোগ-সুবিধার গ্রাফ উর্ধ্বমুখী। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের কাছে যে দলটি ৩ উইকেটে হেরেছে, সেটির প্রত্যেক ক্রিকেটারও পাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা করে।

0 Comments:

Post a Comment